সফলতার গল্প ০২ঃ মনিরুল ইসলামের সফলতার গল্প
গাংনী উপজেলার ষোলটাকা গ্রামে মাছ চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন মনিরুল ইসলাম। এক সময় কৃষি জমিতে চাষাবাদের কাজ করতেন মনিরুল ইসলাম। কৃষি কাজে পুঁজি হারিয়ে একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। অভাবের সংসারে জন্ম হয় আরেকটি মেয়ের। এদিকে প্রথম মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। যেখানে অভাব নিত্য সঙ্গী সেখানে লেখাপড়া হয় কি করে! তিনি হয়ে পড়েন দিশেহারা। হয়তবা অভাব মেটানোর তাগিদে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন সেই অষ্টম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায়। তিনি আশায় বুক বাঁধেন অভাব দূর হবে কিন্তু অভাব আর মেটে না। একবেলা পেট ভরে খেতে গেলে পরের বেলায় ঘাটতি পড়ে। তাই মনে মনে কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করতেন তিনি। তাই কৃষি কাজের পাশাপাশি শুরু করেন মাছ চাষ। তবে সেটা অল্প পরিসরে। বাড়ির পাশের পতিত ছোট পুকুর সংস্কার করে সেখানে অল্প কিছু মাছ ছেড়ে দেন তিনি। পরিবারের চাহিদা অনায়েসে মেটাতে পারতেন তিনি। তারপর বড় পরিকল্পনা মাথায় চেপে বসে তার। কিন্তু টাকার অভাবে সে পরিকল্পনা আর সফলতার মুখ দেখছিল না।
টাকার অভাব মেটানোর জন্য পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতিতে ভর্তি হন । প্রথমে বিশ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ছোট পুকুরটি কেটে বড় করেন ও মাছ ছাড়েন। মাছ চাষের পাশাপশি পাড়ে অল্প কিছু সবজি চাষ করেন । পুকুর থেকে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ বাজারজাত করে কিছু টাকা আয় করেন। এছাড়াও পাড়ে চাষকৃত সবজি বাজারে বিক্রি করে সেখান থেকেও টাকা আয় করেন।
ইতিমধ্যে তিনি পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ইউনিটের মৎস্য খাতের আওতায় ভিয়েতনাম পাঙ্গাস-কার্প মিশ্র চাষ প্রযুক্তি গ্রহণ করেন ও পুকুরপাড়ে পেঁপে, মরিচ, ঢেঁরস, পুঁই শাক, বেগুণ, পেঁয়াজ, রসুন, পালং শাকসহ অন্যান্য সবজি চাষ করেন।
পুকুরে মাছ ও পাড়ে সবজি চাষের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিম্নরূপঃ
নং |
আয়ের খাত |
পরিমাণ (কেজি) |
একক মূল্য |
মোট (টাকা) |
১ |
মাছ বিক্রয় |
১৩৮০ কেজি |
১২০/- |
১৬৫,৬০০/- |
২ |
পাড়ে উৎপাদিত সবজি বিক্রয় |
১২০ কেজি |
৩৫/- |
৪,২০০/- |
৩ |
পুকুরে অবশিষ্ট মজুতকৃত মাছ |
২৭ কেজি |
১২০/- |
৩,২৪০/- |
মোট আয়ঃ |
১৭৩,০৪০/- |
নং |
ব্যয়ের খাত |
মোট (টাকা) |
১ |
পুকুর সংস্কার বাবদ খরচ |
১৮৫০/- |
২ |
মাছ চাষ বাবদ মোট খরচ (পোনা ক্রয় ও খাবার সহ) |
৭৫,৫৪০/- |
৩ |
পাড়ে সবজি চাষ বাবদ খরচ |
১৬২০/- |
৪ |
চুন, সার, মেডিসিন প্রয়োগ, মাছ আহরণ, বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য বাবদ খরচ |
৪২৪০/- |
|
মোট ব্যয়ঃ |
৮৩,২৫০/- |
নীট লাভঃ ১৭৩,০৪০-৮৩,২৫০= ৮৯,৭৯০ টাকা |
এতে তিনি সফলতার মুখ দেখলে দ্বিতীয় মেয়াদে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি থেকে টাকা উত্তোলন করে নতুন আরেকটি পুকুর লিজ নিয়ে ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেন। এবার অভাবনীয় সাফল্য আসে তার কাজে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন। পরিবারের খরচ ও মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটানোর পাশাপাশি কিছু টাকা জমাও করেন। ভবিষ্যতে তার আরও বড় বিনিয়োগ করে মাছ চাষের পরিসর বাড়ানোর পাশাপাশি গরু লালন পালনের পরিকল্পনা রয়েছে।